বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন
মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান
(নিপোর্ট)-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা
এক কোটি ১০ লাখ। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২৬ লাখ আর ৩৫ বছরের বেশি
বয়সীদের সংখ্যা ৮৪ লাখ। ২০৪৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে দেড়
কোটিতে।
ডায়াবেটিসকে প্রধানত টাইপ-১ ও টাইপ-২ এই দুইভাগে
ভাগ করা হয়। আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ রোগী টাইপ-২ ধরনের।
টাইপ-১ হচ্ছে যাদের শরীরে একেবারেই ইনসুলিন
তৈরি হয় না। তাদের ইনসুলিন বা পুরোপুরি ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেজন্য সবসময় চিকিৎসকের
পরামর্শে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তবে টাইপ-২ ধরনের ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা
অবলম্বন করে রাখলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ঠেকিয়ে রাখা বা বিলম্বিত করা সম্ভব।
এক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। সেই বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজনে
থাকছে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধের ৫টি উপায়।
১.
প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটুন
নগর জীবনে আমাদের শারীরিক পরিশ্রম এবং হাঁটার
প্রবণতা অনেক কমে গেছে। কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কিন্তু
যাদের পিতা-মাতা বা পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের জেনেটিক্যালি ডায়াবেটিসে
আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে তারা যদি আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই নিয়মিত হাঁটা-চলা
ও শারীরিক পরিশ্রম করতে শুরু করেন, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া
থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
এক্ষেত্রে খেলাধুলা বাড়ানো যেতে পারে।
হাঁটাহাঁটি করার কারনে শরীরের ভেতরে ইনসুলিন
এর সেন্সিটিভিটি বেড়ে যায়, এজন্য কেউ যদি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়েও থাকে তার নিয়ন্ত্রণ
ভালো থাকবে। এছাড়া ধমনীর ভেতরের দিকে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) নামের একটা কেমিক্যাল থাকে,
যেটা শিরা বা ধমনী প্রসারিত করে, এভাবে উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের বিভিন্ন অসুখ নিয়ন্ত্রণ
করে। হাঁটাহাঁটি করলে ধমনী বা শিরায় নাইট্রিক অক্সাইড নি:সৃত হয়।
২.
লাইফস্টাইলে পরিবর্তন
রিফাইন করা চিনি এড়িয়ে চলতে হবে। একই সাথে
প্রসেসড ফুড যত কম সম্ভব ব্যবহার করতে হবে, সম্ভব হলে এড়িয়ে চলা উচিৎ। যাদের পরিবার
বা বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই জীবনযাপনের
ধরন পাল্টানো উচিত।
যাদের হৃদরোগ রয়েছে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি,
উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
যেসব শিশুর ওজন বেশি, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন,
দাদা-দাদী, নানা-নানী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস রয়েছে, যাদের মায়ের গর্ভাবস্থায়
ডায়াবেটিস হয়েছিল, সেই সব শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে তাদের
উচিত আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা। এই পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে
নিয়মিত সময়ে খাবার খাওয়া, নিয়ম মেনে সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়া, যানবাহন
ব্যবহার কমিয়ে হাঁটা-চলা বাড়ানো, মিষ্টি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার
করা ইত্যাদি।
৩.
ধূমপান ও মদ্যপান ছেড়ে দিন
শুধুমাত্র ডায়াবেটিস নয়, আরও অনেক রোগের কারণ
হতে পারে ধূমপান ও মদ পানের অভ্যাস। ডায়াবেটিস রোগ ঠেকাতে যেসব খারাপ অভ্যাস সবার আগে
বাদ দিতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস। কারণ এগুলো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়। স্থূলতা বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়ার কারণেও ডায়াবেটিস
রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। সাধারণ মিষ্টিজাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, কোমল
পানীয়, ভারী খাবার স্থূলতার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের ওজনের দিকে লক্ষ্য রাখতে
হবে, যাতে কোনভাবেই অতিরিক্ত ওজন বা মুটিয়ে যাওয়া না হয়।
৪.
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে চলুন
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
এড়িয়ে চলতে হবে হোয়াইট পাস্তা, প্যাস্ট্রি, ফিজি ড্রিংক, চিনি জাতীয় পানীয়, মিষ্টি
ইত্যাদি। স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে শাক সবজি, ফল, বিন্স এবং মোটা দানার খাদ্য শস্য
এধরণের খাবার খেতে পারেন। স্বাস্থ্যকর তেল, বাদাম খাওয়াও ভালো। ওমেগা থ্রি তেল আছে
যেসব মাছে সেগুলো বেশি খেতে হবে।
এক বেলা পেট ভরে না খেয়ে পরিমাণে অল্প অল্প
করে বিরতি দিয়ে খাওয়া দরকার। এছাড়া প্রতি সপ্তাহেই নিয়মিত ওজন মাপতে হবে। শরীরের জন্য
পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি ও খাবার নিশ্চিত করার জন্য পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে খাবারের
তালিকা তৈরি করে সেটা অনুসরণ করা উচিত। ফলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে, তেমনি
ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৫.
নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন
যাদের শিশুর ঘনিষ্ঠ স্বজনদের ডায়াবেটিসের
ইতিহাস রয়েছে, তাদেরকেও বছরে অন্তত একবার করে পরীক্ষা করাতে হবে। সেই সঙ্গে বছরে অন্তত
একবার লিপিড প্রোফাইল ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে:
- ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা
· - দুর্বল লাগা ও ঘোর ঘোর ভাব আসা
· - ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
· - সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া
· - মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
· - কোন কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া
· - শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা
· - চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব
· - বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা
· - চোখে কম দেখতে শুরু করা
Nationwide Delivery: We are committed to making your shopping experience hassle-free. Benefit from our nationwide delivery service, ensuring that you can enjoy the best of Bangladeshi lifestyle products, no matter where you are.
Elevate your lifestyle with Healthy Living BD - where tradition meets modernity, and well-being is a way of life. Join us on this journey of cultural discovery and conscious living. Shop with us today!