স্বাস্থ্যকে বলা হয় সকল সুখের মূল। যদি স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে কোনো কাজ করতে ভালো লাগেনা। এছাড়াও স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকে না। এজন্য স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের এই আয়োজনে থাকছে স্বাস্থ্য ভালো রাখার কয়েকটি উপায়।

১. সঠিক সময় সঠিক খাবার খাওয়া

শরীরকে সুস্থ্য রাখাতে হলে সবার প্রথমে যে বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হবে সেটি হচ্ছে সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে খাবার খাওয়া। সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের ৪০ ধরনের নিউট্রিয়েন্টসের দরকার হয়। কোন একক খাবার তা আমাদের দিতে পারে না। এজন্য আমাদের সুষম খাদ্যের প্রয়োজন হয়। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার আমাদের শরীরের ঘাটতি মেটায়। সে সাথে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে ভূমিকা পালন করে। পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে উচ্চ ফাইবার, কম ফ্যাট এবং উদ্ভিদ জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ টি ফল খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে। নিয়মিত সঠিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্য তালিকা করা যেতে পারে। এতে করে খুব সহজেই শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা যায়।

শরীরে পুষ্টির চাহিদা ও শরীরকে সুস্থ রাখতে যে সকল খাবার খাওয়া উচিতঃ

- দুধ ও দুদ্ধ জাত খাবার খেতে হবে।

- দিনে অন্তত ৬ থেকে ৮ টি ফল খেতে হবে এবং শাকসবজি খেতে হবে।

- উচ্চমানের আঁশযুক্ত খাবার যেমন চাল, আলু, পাস্তা, রুটি খেতে হবে।

- সিম, ডাল, মাছ, মাংস ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।

- ফ্যাট জাতীয় খাবার কমাতে হবে।

- দিনে অন্ততপক্ষে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি খেতে হবে।

২. সবজি ও ফলমূল খাওয়া

শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে শাক-সবজি ও ফলমূলের বিকল্প নেই। শাক সবজি ও ফলমূল আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। শাকসবজি ও ফলমূলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। আপনি ভিটামিনের ঔষধ না খেয়ে প্রাকৃতিক এই ভিটামিন গ্রহণ করতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না। বিশ্বের সকল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররা সুস্থ থাকতে প্রাকৃতিক খাবারের পরামর্শ দেন। প্রাকৃতিক খাবার বলতে শাকসবজি ও ফলমূলকে বোঝানো হয়েছে। তাই নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত শাকসবজি এবং ফলমূল জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করুন।

৩. প্রতিদিন পর্যন্ত পরিমাণে পানি পান করুন

আমাদের দেহের প্রায় ৭০ ভাগ পানি। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে আমরা পানি ছাড়া কল্পনাই করতে পারি না। শরীরকে সুস্থ রাখতে পানির বিকল্প নেই। পানি আমাদের বদহজম, ডিহাইড্রেশন, মাথাব্যথা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের রোগ সারাতে কাজ করে।

পানি পানের আরও কিছু গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

- হাড়ের জোর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

- গরমে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

- ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে।

৪. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ও বিশ্রাম করুন

শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে ঘুমের বিকল্প নেই। যদি আপনি নিয়মিত সঠিক পরিমাণে না ঘুমান তাহলে আপনার শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। একজন সুস্থ মানুষের দিনে কমপক্ষে সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমানো দরকার। যদি আপনি দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমান তাহলে আপনার শরীরের উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কম ঘুমের ফলে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দেয়, খাওয়ার রুচি চলে যায় ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞদের মতে পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখে। কম ঘুমালে শরীরের ওজন দ্রুতই কমে যায়। এতে করে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। পরিশ্রমের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ও বিশ্রাম করা প্রয়োজন। কম ঘুমানোর ফলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে বিষন্নতা, হৃদরোগ, টাইপ সি ডায়েবেটিস, মেজাজ খিটখিটে ইত্যাদি। এসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে ঘুমের বিকল্প নেই। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান।

৫. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

শরীর ও মনকে ভালো রাখার জন্য ব্যায়াম খুবই উপকারী। আপনার শরীরকে ফিট এবং রোগ মুক্ত রাখতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে বা ব্যায়াম করতে হবে। এতে করে ৮৫% স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত ব্যায়াম হৃদরোগ, টাইপ-৩ ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য রোগকে ৫০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। সেই সাথে মৃত্যুঝুকিও ৩০% কমিয়ে আনে। তাই শরীর ও মনকে ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

৬. প্রতিদিন পর্যাপ্ত আলো বাতাস গ্রহণ করুন

সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত আলো বাতাস গ্রহণ করা জরুরী। এটি শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এছাড়াও সূর্যের আলো রক্তচাপ কমাতে, হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে, হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনার বাসস্থান এমনভাবে নির্মাণ করুন যেন প্রতিদিন সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশ করে। প্রতিদিন শরীরকে সুস্থ রাখতে সকালে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এতে করে শরীরে যেমন সূর্যের আলো লাগবে তেমনি পর্যাপ্ত নির্মল বাতাসে পাওয়া যাবে। আর আপনার শরীর স্বাস্থ্য ও মেজাজ দু’ই ভালো থাকে। ডাক্তাররা পরামর্শ দেন যে, প্রতিদিন সকালে হাঁটাহাঁটি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৭. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়মিত চেকআপ করুন

আমরা অনেক সময় আমাদের শরীরের ছোট খাটো সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্তু একটা সময় এসব ছোট খাটো সমস্যা বড় আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়াও শরীরের বাইরে দেখে শরীরের ভেতর কি চলছে সেটা বুঝা যায় না। তাই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এতে করে কোন রোগ বাসা বাঁধলেও বেশি একটা বিস্তার করতে পারবে না। সহজেই সে রোগকে নির্মূল করা যাবে।

৮. শরীর সুস্থ রাখতে বেশি করে হাসুন

শরীরের সাথে মনের সম্পর্ক পরিপূরক বলা যায়। শরীর ভালো থাকলে যেমন মন ভালো থাকে, তেমনি মন ভালো থাকলে শরীর সতেজ মনে হয়। তাই শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত প্রাণ খুলে হাসুন। হাসি মানুষের শরীর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। অনেকের ধারণা কৃত্রিম হাসি মানুষের শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে কিনা! বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, হাসি মানুষের শরীর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এটি মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। হোক সেটা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম।

উপসংহার

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে উপরের নিয়ম গুলো সকলকে মেনে চলতে হবে। তবেই আপনার শরীর ও মনকে সুস্থ থাকতে পারবেন। এর পাশাপাশি ডায়েট, স্বাস্থ্যসেবা, নিয়মিত ঘুমানো ইত্যাদি বিষয় মেনে চলতে হবে। সেইসাথে আপনার জীবনকে সুস্থ ও নির্মল করতে নিয়মিত অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।