এই মূহুর্তে দেশে চলছে শীতের প্রকোপ। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সময়টাতে হাসপাতালে
রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম থাকলেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশ। যার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু রোগী। শিশুদের ডায়রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক..
শিশুর ডায়রিয়া ও আপনার করণীয়:
আমরা সবাই জানি, ডায়রিয়া একটি খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। অর্থাৎ, রোগজীবাণু
খাদ্য ও পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া দুই বছরের নিচে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রধান
কারণ হলো রোটা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। এই ভাইরাস ডায়রিয়া সাধারণত তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত
থাকতে পারে।
ডায়রিয়ার সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো পানিশূন্যতা। পানিশূন্যতা হলে শিশু দুর্বল
হয়ে পড়ে। শিশুর মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। শিশুর প্রস্রাব কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়,
এমনকি শিশু মারাও যেতে পারে।
কী দেখে বোঝা যাবে শিশুর পানিশূন্যতা
হয়েছে:
অস্থির ভাব। খিটখিটে মেজাজ বা নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া
তৃষ্ণার্ত ভাব বা একেবারেই খেতে না পারা, চামড়া ঢিলা হয়ে যাওয়া। পানিশূন্যতার মাত্রা
ভেদে শিশুর চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।
ওপরের উল্লিখিত লক্ষণগুলোর যেকোনো একটা থাকলেও শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে।
পানিশূন্যতা যাতে না হয়, সে জন্য বাড়িতে
কী করবেন:
শিশুকে বেশি করে খাওয়ার স্যালাইন ও তরল খাবার, যেমন-ভাতের মাড়, চিড়ার পানি,
ডাবের পানি, টকদই, ঘোল, ফলের রস ও লবণ-গুড়ের শরবত খেতে দিন। অনেকে মনে করেন, স্যালাইন
খাওয়ালেই ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে, এমন ধারণা সত্যি নয়। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে যে পানি
ও লবণ বের হয়ে যায়, স্যালাইন তা পূরণ করে মাত্র।
এক প্যাকেট গুলাবেন না-এতে লবণের মাত্রা কম-বেশি হতে পারে এবং শিশুদের মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে
পারে। প্রতিবার পায়খানার পর ১০ থেকে ১৫ চামচ স্যালাইন শিশুকে খেতে দিন। মনে রাখবেন,
স্যালাইন খাওয়াতে হবে ধীরে ধীরে এক চামচ এক বা দুই মিনিট পর পর। একবারে বেশি দিলে শিশুর
বমি হতে পারে বা পায়খানা বেড়ে যাবে।
শিশুকে অন্যান্য খাবার দিতে হবে:
শিশুর বয়স যদি ছয় মাসের কম হয়, তাহলে তাকে বারবার মায়ের দুধ খেতে দিন। কখনোই
বুকের দুধ বন্ধ করা যাবে না। শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হলে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিবারের
অন্যান্য খাবার অবশ্যই দিতে হবে। অনেক পরিবার শিশুর ডায়রিয়া হলে শিশুকে মাছ, মাংস,
ডাল, কলা, শাকসবজি খেতে দেন না; শুধু চালের গুঁড়া, বার্লি বা জাউভাত খেতে দেন। অসুস্থ
অবস্থায় শিশুকে স্বাভাবিক খাবার খেতে না দিলে শিশু দুর্বল হয়ে যায়। ডায়রিয়া তাড়াতাড়ি
ভালো হয় না এবং পরে শিশুর অপুষ্টি দেখা দিতে পারে।
পরিবারের খাবার, যেমন-খিচুড়ি, ডাল-ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, পাকা কলা, তাজা
ফলের রস, সবজি—সবকিছুই শিশু খেতে পারবে। খাবার রান্না করার সময় সয়াবিন তেল দিতে ভুলবেন
না। কাঁচকলা সিদ্ধ করে নরম ভাতের সঙ্গে চটকে দিন বা খিচুড়ির সঙ্গে কাঁচকলা দিন। কাঁচকলা
ডায়রিয়ার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন তৈরি করুন। সারা দিন
কমপক্ষে ছয়বার, অর্থাৎ তিন-চার ঘণ্টা পর পর শিশুকে খাবার দিন। অল্প করে দিলে শিশুর
পক্ষে খাবার হজম করা সহজ হবে।
১৫ দিনের জন্য জিংক সিরাপ বা বড়ি খেতে দিন। খেয়াল করুন, শিশুর অবস্থা খারাপের
দিকে যাচ্ছে কি না। তা হলে শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে।
কখন শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে:
পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে স্যালাইন বা অন্যান্য খাবার খেতে না পারলে
অতিরিক্ত তৃষ্ণাভাব থাকলে খুব বেশি পরিমাণ পানির মতো পায়খানা হলে বারবার বমি হলে তীব্র
জ্বর থাকলে পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে ১৪ দিনের বেশি ডায়রিয়া থাকলে।
মনে রাখবেন:
- জন্মের পর পরই শিশুকে শালদুধ দিন এবং ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খেতে দিন।
- শিশুকে বোতল দিয়ে দুধ খাওয়াবেন না।
- চালের গুঁড়া খাওয়াবেন না।
- শিশুকে নিয়মিত টিকা দিন খাবার ও পানি ঢেকে রাখুন।
- বাইরের খাবার শিশুকে খাওয়াবেন না। বাসি খাবারও দেবেন না।
- পানি কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ফুটিয়ে শিশুকে খাওয়ান।
- ফোটানো পানি দিয়ে শিশুর হাত, মুখ ধোয়াবেন, গোসল করাবেন, বাটি, চামচ ধুয়ে
নিন। ব্রাশ করার পর ফোটানো পানি ব্যবহার করুন।
- ফলমূল (কলা, আপেল) ফোটানো পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
ডায়রিয়া শুরু হলেই অ্যান্টিবায়োটিক বা মেট্রোনিডাজল-জাতীয় ওষুধ খাওয়াবেন
না। ডায়রিয়ার চিকিৎসা কোন এন্টিক নয়। প্রধান চিকিৎসা পানিশূন্যতা পূরণ করা। পায়খানা
বন্ধ করার কোনো ওষুধ নেই।
শিশুর যত্ন নিন, ধৈর্য ধরুন। সম্ভব হলে শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে রোটা
ভাইরাসের টিকা দিন।
Nationwide Delivery: We are committed to making your shopping experience hassle-free. Benefit from our nationwide delivery service, ensuring that you can enjoy the best of Bangladeshi lifestyle products, no matter where you are.
Elevate your lifestyle with Healthy Living BD - where tradition meets modernity, and well-being is a way of life. Join us on this journey of cultural discovery and conscious living. Shop with us today!