সুস্থ থাকতে ব্যায়াম করার কোনো বিকল্প নেই। ব্যায়ামের ফলে আমাদের শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি আমাদের মনও সুস্থ থাকে। এজন্য আমাদের সকলকেই নিজের সুস্থতার জন্য নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা উচিৎ। বর্তমানে আমরা এক জায়গায় বসে কাজ করার ফলে আমাদের শরীরে তেমন একটা নড়াচড়া হয় না। আর নড়াচড়া না হওয়ার ফলে দেখা দেয় নানা শারীরিক জটিলতা। ব্যথা, যন্ত্রণা, পক্ষাঘাত। সেসব এড়াতে প্রতিদিন এই সহজ ব্যায়ামগুলো করতে পারেন।

মেঝেতে আসন পেতে বসুন

প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিট মেঝেতে বসে থাকার অভ্যাস আপনার কোমর ও মেরুদণ্ডকে মজবুত করবে। সে জন্য তিন ধরনের আসনে বসতে পারেন। স্কুলের দিনগুলোর মতো দুই পা সামনে আড়াআড়ি করে রেখে বসতে পারেন। এক পা সোজা রেখে আরেক পা মেঝের সমান্তরালে নিয়ে ৯০ ডিগ্রি কোণ বানিয়ে বসুন। কিংবা দুই পা সামনে সোজা রেখে পিঠ টান টান করে বসুন।

স্কোয়াট

স্কোয়াটে হাঁটু ভাঁজ করে দাঁড়াতে হবে। কোমর নিচের দিকে ঝুলে থাকবে। হাত দুটো রাখতে হবে মেঝের সমান্তরালে। পায়ের আঙুলগুলো সামনের দিকে ভর দিয়ে থাকবে। এটা হাঁটু, কোমর, পিঠ ও শ্রোণী অঞ্চলের জন্য সহায়ক।

পিজিয়ন পোজ

আপনার ডান পা একটা বেঞ্চি বা টেবিলের ওপর রাখুন। হাঁটু পর্যন্ত সমান্তরাল করে নামান। বাঁ হাত দিয়ে গোড়ালি চেপে রাখুন। এবার শরীর (ধড়) একবার ডানে ঘোরান, আরেকবার বাঁয়ে। যোগব্যায়ামের ভাষায় একে বলে পিজিয়ন পোজ।

দড়ি লাফ

আরেকটা দারুণ ব্যায়াম হলো দড়িলাফ। কিন্তু এ বাবদে নিয়মিত না হলে দড়িলাফের বদলে শুধু লাফাতে পারেন। আঙুলে ভর দিয়ে ছোট ছোট করে লাফ দিন। লক্ষ্য নির্ধারণ করুন ৫০ বার।

নিয়মিত হাঁটুন

ব্যায়ামের মধ্যে সবার সেরা হাঁটা। এটা হাড়, হাড়ের সংযোগ ও মাংসপেশিকেও সবল করে। সাহায্য করে ভালো ঘুম ও ওজন নিয়ন্ত্রণেও। সে জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার পা। একা হাঁটার চেয়ে চেষ্টা করুন সঙ্গী জোগাড় করে হাঁটার। শুধু হাঁটার চেয়ে ঘাড়ে ওজন নিয়ে হাঁটা আরও ভালো। সে জন্য ব্যাগে করে ২ থেকে সাড়ে ৪ কেজি ওজন বহন করুন। কিংবা হাঁটতে পারেন চড়াই পথে।

দাঁড়িয়ে কাজ করুন

আপনি যতই ব্যায়াম করুন, দিনে যদি ৬-৭ ঘণ্টা বসেই কাটিয়ে দেন, তাহলে পিছিয়ে পড়তে হবে। কারণ, বসে থাকার চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় দ্বিগুণ ক্যালরি খরচ হয়। তাই কাজে ব্যবহার করতে পারেন দাঁড়ানোর টেবিল। না পারলে নিয়মিত বিরতি নিয়ে খানিকটা হাঁটুন। লিফটের বদলে ব্যবহার করুন সিঁড়ি।

খালি পায়ে চলাফেরা করুন

প্রকৃতিগতভাবে আমাদের পা মাটিকে স্পর্শ করার কথা। তাতে আমাদের শরীর পায়ের অবস্থান সম্পর্কে টের পায়। কিন্তু এখন আমরা সব সময় জুতা পরে থাকি। পা মাটিকে স্পর্শই করে না। সুযোগ পেলেই তাই খালি পায়ে চলা উচিত। আর দিনে মিনিটখানেক হাত দিয়ে পা মেসেজ করুন।

পর্যাপ্ত ঘুম

এমনিতে মনে হয় ঘুমের মধ্যে আমরা নিঃসাড় পরে থাকি। শরীরের কোনো নড়াচড়াই হয় না। আসলে তা নয়। ঘুমের মধ্যেও শরীর শক্তি খরচ করে। তাই পর্যাপ্ত ঘুমানোও জরুরি। দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন

আপনি যে ব্যায়াম যত কঠোরভাবেই করুন না কেন, সে অবস্থায় যদি ঠিকমতো শ্বাসপ্রশ্বাস চালাতে না পারেন, তাহলে আপনার ব্যায়াম ঠিকঠাক হচ্ছে না। সে জন্য নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। বড় করে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। চেষ্টা করুন প্রক্রিয়াটা নাক দিয়ে করতে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান